সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:০২ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ত্রিপক্ষীয় চুক্তির পর গত ১ মাসে ১০ লাখ টনের বেশি খাদ্যশস্য যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ষষ্ঠ মাসে ২২ জুলাই তুরস্কের মধ্যস্থতায় এই দুই দেশের মধ্যকার ঐতিহাসিক ও বহুল প্রত্যাশিত চুক্তি সইয়ের পর ১ আগস্ট থেকে এই বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য রপ্তানি হয়েছে। তুরস্কের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শনিবার এই তথ্য দিয়েছে।
শনিবার ছেড়ে যাওয়া তিনটি শস্যবাহী জাহাজসহ এ পর্যন্ত ১০৩টি জাহাজ ইউক্রেনের বিভিন্ন বন্দর ছেড়েছে।
তুরস্কের সংবাদ মাধ্যম আনাদৌলু এজেন্সি ও কামহুরিয়েতের প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তিনটি দেশের প্রতিনিধিদের নজরদারিতে একটি যৌথ কমিশনের মাধ্যমে এসব জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের নৌযানের ওপর রাশিয়ার দেয়া অবরোধ তুলে নেয়ার পর শুরু হয় রপ্তানির প্রক্রিয়া।
রাশিয়ার হামলা শুরুর পর বন্ধ হয়ে যায় ইউক্রেন থেকে গমসহ খাদ্যপণ্য রপ্তানি। এই দেশ দুটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশ। এতে বড় ধরনের খাদ্যসংকটে পড়ে যায় গোটা বিশ্ব।
তবে ২২ জুলাই বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট সমাধানে প্রতীক্ষিত এক চুক্তিতে পৌঁছায় রাশিয়া ও ইউক্রেন। ওই চুক্তির আওতায় কৃষ্ণসাগরে অবরোধ তুলে নেয় রাশিয়া। এতে ইউক্রেন থেকে জাহাজে করে খাদ্য রপ্তানির পথে সব বাধা ওঠে যায়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির কার্যালয় জানিয়েছে, খাদ্যশস্য নিয়ে ওইসব জাহাজ যেকোনো সময় রওনা হতে পারে।
গত ২২ জুলাই মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে শস্যপণ্য রপ্তানি নিয়ে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী সব মিলিয়ে ২ কোটি ৫০ লাখ টন খাদ্যশস্য পাঠানো হবে ইউক্রেন থেকে।
এসব খাদ্যশস্য যাচ্ছে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। জাহাজগুলো নির্ধারিত নিরাপদ চ্যানেল ব্যবহার করছে।
এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় সময় শুক্রবার ওডেসার চেরনোমর্স্ক বন্দর পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। খাদ্যশস্য বহনের দায়িত্বে থাকা নাবিকদের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।
পাঁচ মাস আগে যুদ্ধ শুরুর পরপরই ইউক্রেন উপকূলের কাছে কৃষ্ণসাগরে রাশিয়া নৌ অবরোধ দিলে মুখ থুবড়ে পড়ে ইউক্রেনের রপ্তানি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন বেশ কয়েকটি জাহাজে খাদ্যশস্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ইউক্রেনের পক্ষে। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতিতে এসব জাহাজ রওনা হতে না পারলে খাদ্যসংকেটে ভোগা দেশগুলো আরও দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে পারে।
খাদ্যশস্য রপ্তানি নিয়ে দুই দেশের হওয়া চুক্তিটি ১২০ দিনের জন্য কার্যকর থাকবে। চুক্তির মেয়াদ আরও আলোচনা ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়তে পারে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
যুদ্ধে বহু মানুষ হয়েছে বাস্তুচ্যুত। হতাহতের সংখ্যাও অনেক। এরই মধ্যে কয়েক দফা যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে চুক্তি হলেও কার্যত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি এখনও।
গত ৪ আগস্ট খাদ্যশস্য বোঝাই আরও তিনটি জাহাজ যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন ছাড়ে। সেই সঙ্গে শস্যবোঝাই ১৬টি জাহাজ দেশটির ওডেসা বন্দর ছেড়ে যায়। তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকার এমনটি জানায়।
প্রথম জাহাজটি ২৬ হাজার টন ভুট্টা নিয়ে ইউক্রেনের ওডেসা বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে ইস্তানবুল হয়ে লেবাননের উদ্দেশে যায়।
সিয়েরালিয়নের পতাকাবাহী রাজনি নামের জাহাজটি বসফরাস প্রণালি পাড়ি দেয়ার সময় বুধবার ইউক্রেন ও রাশিয়ার পরিদর্শকদল এটিকে পর্যবেক্ষণ করে।
জাহাজের যাত্রার পুরো পথটি আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদল, তুরস্ক ও জাতিসংঘের সদস্যরা নজরদারিতে রাখে।
পর্যবেক্ষকদল জানিয়েছে, এই জাহাজের সফল ও নিরাপদ যাত্রাই বলে দেবে যুদ্ধরত দুই পক্ষ তাদের মধ্যকার চুক্তির বিষয়ে কতটা শ্রদ্ধাশীল।
তুরস্ক জানিয়েছে, এই চুক্তির যথাযথ কার্যকারিতাই পরবর্তীতে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে দুই দেশের প্রতিনিধিদের সহায়তা করবে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে যুদ্ধবিরতির বিষয় জোর প্রচেষ্টা চালান।